নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (চ: দা:) মোছা: মাহফুজা আক্তারের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতির এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর তদন্ত রহস্যজনক কারণে থমকে গেছে। শিল্পী সম্মানির ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে গায়েব করা হয়েছে মর্মে প্রমাণ পেয়ে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়েও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। একইসাথে নীতিমালা লংঘন করে ভুয়া কমিটির মাধ্যমে ১৭৬১ জন শিল্পীকে তালিকাভুক্তির জন্য কোটি-কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হয়েছে মর্মে ভাইরাল হওয়া অডিও ফাঁসের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিডিজি ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও সাবেক পিএম (সঙ্গীত) মোহাম্মদ মোল্লা আবু তৌহিদ, যন্ত্রশিল্পী সুমন রেজা খানসহ প্রকৃত অপরাধীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অপরদিকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষ ২ মাসে অর্থাৎ মে-জুন ২০২৪ মাসে অনুষ্ঠান না করে, ভুয়া বিল/ভাউচার এবং বাজেটের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা লুটপাট করে দুর্নীতির সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছেন সাবেক ডিজি ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক জিএম মোছা: মাহফুজা আক্তার, অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মো: আতাউর রহমান, নিয়ন্ত্রক (ডিজাইন) মোহাম্মদ সেলিম, পিএম (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোল্লা আবু তৌহিদ এবং পিএম সাহরিয়ার মোহাম্মদ হাসান সিন্ডিকেট।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (চ: দা:) মোছা: মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগে গঠিত কয়েকটি তদন্ত কমিটির এক কমিটি কয়েকমাস আগে শিল্পী সম্মানির ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে গায়েব করা হয়েছে প্রমাণ পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
তদন্ত কমিটি দীর্ঘদিন কার্যসম্পাদন শেষে গত ২৩-০৮-২০২৩ তারিখে একটি তদন্ত প্রতিবেদন মহাপরিচালক বরাবর দাখিল করলেও অসৎ উদ্দেশ্যে এবং রহস্যজনক কারণে সাবেক ডিজি ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘ কয়েকমাস ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘ কয়েকমাস ধামাচাপার বিষয়ে জাতীয় দৈনিকসহ বহু মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে তড়িঘড়ি করে তদন্ত প্রতিবেদনটি ডিজি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনে মাহফুজা আক্তার ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে শিল্পী সম্মানি কোডে ব্যয় সীমিত না রেখে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনুমোদন ছাড়াই ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা লোপাট করেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাহফুজা আক্তার বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা এবং ভুয়া তথ্য সরবরাহ করে এ বিশাল অর্থের কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মাহফুজা আক্তার আর্থিক বিধি-বিধান, আদেশ, অনুশাসন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই বিশাল অংকের দুর্নীতি করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিবেদনে অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মো: আতাউর রহমানের সক্রিয় সহযোগিতায় এ বিশাল অংকের শিল্পীদের টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করতে সক্ষম হয়েছে মর্মে মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন বলেন, ‘‘বিটিভির দুর্নীতির এ তদন্তকালে শাস্তিস্বরূপ আতাউর রহমানকে গত ১৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বদলি করা হলেও মাহফুজা আক্তারকে তখন জিএম পদ থেকে না সরানোর কারণে তদন্তকালে কেন্দ্র প্রধান হিসেবে তিনি তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিথ্যা এবং ভুয়া তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে তদন্ত কমিটিকে চরমভাবে অসহযোগিতা করেছেন। তদন্তকালে মাহফুজা আক্তার এবং আতাউর রহমান অনেক কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছেন এবং অনেক ভুয়া বিল-ভাউচার সংযোজন করেছেন; তদুপুরিও ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার কেলেঙ্কারি পাওয়া গেছে’’। তদন্ত কমিটির এরকম স্পর্শকাতর রিপোর্ট মহাপরিচালকের হাতে থাকার পরও বিটিভির অডিট চলাকালে মহাপরিচালক গত ০৪-১০-২০২৩ থেকে ১৬-১০-২০২৩ পর্যন্ত আতাউর রহমানকে বদলি করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে আসেন মূলত এই ১৩.২৮ কোটি টাকার কেলেঙ্কারিকে ধামা চাপা দিয়ে “অডিট টিম”-কে ম্যানেজ করার জন্য। অর্থাৎ মহাপরিচালক, জিএম এবং অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) একই সূত্রে গাঁথা আছে মর্মে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। অভিযোগ রয়েছে অডিট চলাকালে এই সিন্ডিকেট ভয় ভীতি দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তার নিকট থেকে চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে অডিট টিমকে ম্যানেজ করেছেন। ফলে তদন্ত কমিটির নিকট প্রমাণিত ১৩ কোটি ২৮ টাকার বিষয়টি অডিট টিম এড়িয়ে যান। এখনো অডিট টিমকে নিয়ে সবার মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। এমনকি আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার আত্মসাৎ-এর তদন্ত রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও গত ১৭ জানুয়ারি’২৪ তারিখে সাবেক মহাপরিচালক তাকে পুরষ্কৃত করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে আসেন। গুঞ্জন রয়েছে বিটিভি সূত্রে জানা যায়, প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, আরো বহু অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাবেক জিএম মোছা: মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর ২টি তদন্ত চলমান রয়েছে কিন্তু তদন্ত কার্যক্রম রহস্যজনক কারণে থমকে রয়েছে। সম্প্রতি বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জিএম মাহফুজা আক্তার কর্তৃক ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিষয়ে অসংখ্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক) নড়ে চড়ে বসেন। ফলে গত ২১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে দুদকের উপসহকারী পরিচালক নাঈমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিটিভির কাছে অনেক তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন কিন্তু আবারও রহস্যজনক কারণে তদন্ত কাযক্রম স্থবির রয়েছে।
বিটিভিতে গুঞ্জন রয়েছে যে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থাৎ জুন ২০২৪ মাসে অনুষ্ঠান না করে, ভুয়া বিল/ভাউচার এবং বাজেটের মাধ্যমে যে ১৮ কোটি টাকা লুটপাট করে দুর্নীতির সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছেন সাবেক ডিজি ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক জিএম মোছা: মাহফুজা আক্তার সেই অর্থের অংশ বিশেষ দিয়ে মন্ত্রণালয় এবং দুদককে ম্যানেজ করেছেন। এমনকি মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে ইতোপুর্বেও কয়েকবার দুদক তদন্ত করার জন্য চিঠি দিয়েছিল কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেগুলোও আলোর মুখ দেখেনি।
সূত্র আরো জানায়, মাহফুজা আক্তার গত ৪ জানুয়ারি-২০২৩ তারিখে বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের সাময়িক চলতি দায়িত্বের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। যোগদানের পর থেকেই তার ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন এবং আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে কয়েকবার সতর্ক করেন। এমনকি দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তৎকালীন মহাপরিচালক তাকে কৈফিয়ত তলপ করেন।
এর আগেও মাহফুজা আক্তার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনকালেও ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত খরচের নামে লুটপাট করেছেন মর্মে তৎকালীন মহাপরিচালক লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানিয়েছিলেন কিন্তু সে ব্যাপারেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অন্যদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ অনুমোদিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী, নাট্যকার, গীতিকার, পান্ডুলিপি রচয়িতা ও কলাকুশলী তালিকাভুক্তি এবং গ্রেডেশন নির্ধারণ সংক্রান্ত নীতিমালা লংঘন করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ১৭৬১ জন শিল্পীকে তালিকাভুক্ত করেছে বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক, ডিডিজি ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ (কমিটির আহবায়ক), ঢাকা কেন্দ্রের সাবেক জিএম এবং পিএম মোহাম্মদ মোল্লা আবু তৌহিদ (কমিটির সদস্য-সচিব)। স্বৈরশাসকের কথিত সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্বে তড়িঘড়ি করে নীতিমালা লংঘন করে নিজের ইচ্ছামত কমিটি গঠনের নামে ১৭৯১ জন শিল্পীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
অডিশনের কার্যক্রম সম্প্রচার না করার জন্য নীতিমালা থাকলেও অডিশনের নামে বিশাল অংকের লুটপাট করা টাকা ধামাচাপা দেয়ার জন্য নীতিমালা লঙ্ঘন করে অডিশনের কার্যক্রমকে সম্প্রচার করা হয়েছে। আরো উল্লেখ করা জরুরী যে, এবারের অডিশনে শিল্পী নয় এমন অনেককে শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যারা অর্থের বিনিময়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং অযোগ্য তাদেরকে আড়ালে রেখে অর্থাৎ তাদেরকে বাদ দিয়ে কিছু শিল্পীর পরিবেশনা একত্রিত করে অনুষ্ঠান বানিয়ে বাজেট ও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে ।
এমনকি সাবেক মহাপরিচালক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে এবং নীতিমালা লংঘন করে তালিকাভুক্তির আগে এবং পরে নিজের ছেলেকে দিয়ে বহু অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে তিনি তাঁর ছেলেকে সংবাদ পাঠকসহ নজরুল, রবীন্দ্র, পল্লীগীতি এবং আধুনিক গানে তালিকাভুক্ত করে বিটিভির নেক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। একইসাথে সাবেক এই মহাপরিচালক প্রধান কার্যালয়ের ১২ তলায় ৮০০০ স্কয়ার ফিট জুড়ে অফিসকে অবৈধভাবে বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। অবশ্য তার চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং চুরিবৃত্তি বহু আমলের পুরনো অভ্যাস।
এর আগেও মাহফুজা আক্তার উল্লেখিত নীতিমালা এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত শিল্পী সম্মানি কাঠামোতে আবৃত্তি শিল্পীদের জন্য “বিশেষ শ্রেণী” কোটা না থাকা সত্ত্বেও অর্থের বিনিময়ে নীতিমালা লংঘন করে বহু আবৃত্তি শিল্পীকে “বিশেষ শ্রেণীতে” উন্নীত করে গোপনে তালিকাভুক্তির চিঠি বিতরণ করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, এরআগে মাহফুজা আক্তার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম হিসেবে চলতি দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি, অপকর্ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বেচ্ছাচারীতার মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজিত রায় (সম্প্রতি গত হয়েছেন) । এরপর দুদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একই বিষয়ে বিটিভির মহাপরিচালককে দায়িত্ব অর্পণ করেন। কিন্তু মহাপরিচালক তদন্ততো করেননি বরং মাহফুজা আক্তারের নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে তদন্ত করতে পারবেন না মর্মে প্রায় ১০ মাস পর মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেন। একইভাবে মাহফুজা আক্তার-এর বিরুদ্ধে আরো বহু অভিযোগ জমা পরলেও সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম ।
দুদক জানায়, মাহফুজা আক্তার চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নিজেই প্রযোজক সেজে ৬৩৯ টি অনুষ্ঠান, বিল-ভাউচার এবং নামে-বেনামে মাহফুজা আক্তার এবং নির্বাহী প্রযোজক সফির হোসাইন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোমানা শারমিনকে অনুপস্থিত দেখিয়ে ৬০,৫৮,৩৪৬/- টাকার চেক নামে বেনামে উত্তোলন করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, মো. সফির হোসেন নির্বাহী প্রযোজক হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে বিটিভি প্রধান কার্যালয়ে গত ২১ নভেম্বরে যোগদান করেন। কিন্তু সফির হোসাইন চট্টগ্রাম কেন্দের কর্মকর্তা না হয়েও সাবেক জিএম মাহফুজা আক্তারের সাথে যোগ সাজেস করে ৭৩ লক্ষ টাকার বাজেট করে আত্মসাৎ করেছেন।
সূত্র জানায়, ইতিপূর্বেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাহফুজা আক্তারে বিরুদ্ধে Japan International Corporation agency (JICA)-এর অর্থায়নে HDTV প্রকল্পের ১৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়ে তদন্তের জন্য কয়েকবার মহাপরিচালককে পত্র প্রেরণ করেছেন কিন্তু রহস্যজনক কারনে পত্র পত্রই থেকে গেছে। মাহফুজা আক্তার এই প্রকল্পের PD থাকাকালীন তার স্বামী, বোন, কাজের মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে ৭ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা আত্মসাথের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এবং বিশাল অংকের বিনিময়ে এই তদন্তটি এখনো আলোর মুখ দেখতে পাইনি। এখানেও প্রকল্পের অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা-আলাদা বিষয়ে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা নামে বেনামে উত্তোলন করার পরেও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে অসংখ্য দিন বিটিভির স্টুডিও, ক্যামেরা, গাড়ি এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট গ্রহণ করেছেন এই মাহফুজ আক্তার । একইভাবে বিটিভির রাজস্ব খাৎভুক্ত অনেক অনুষ্ঠান নির্মাণ না করেই বিশাল বিশাল বাজেট উত্তোলন করেছেন। এমনকি অফিস আদেশ এবং প্রচার না করেই “সংবিক্ষণ” নামে বিশাল বাজেটের কয়েকটি পর্ব নির্মাণ দেখিয়ে ৯৮ লক্ষ টাকা অর্থ শাখা থেকে উত্তোলন করেছেন মাহফুজা আক্তার ।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, মাহফুজা আক্তারের পুরো পরিবারই দুর্নীতিগ্রস্ত। বাবা ছিলেন আয়কর অফিসের পিয়ন আব্দুল মান্নান। বাবার সামান্য আয়ে রংপুর শহরের নিউ জুম্মা পাড়ায় ২ রুমের একটি টিনশেড বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করতেন মাহফুজারা ৫ বোন। কিন্তু গত ১৬ বছরে আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো একের পর এক চাকরি আর ক্ষমতা দিয়ে পুরো পরিবারকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে এই মাহফুজা আক্তার। ২০০৭ সালে চাকরিতে যোগদান করে প্রযোজক অবস্থায় আইন এবং নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ পন্থায়ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে ২৬৫ কোটি টাকার HDTV প্রকল্পের PD হন। বিশাল বেতনে চাকরি দেন ২ বোন, জামাই, কাজের মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনদের। নিজ নামে, স্বামী, কাজের মেয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে চেক বানিয়ে লুফে নেন প্রায় ১৭ কোটি টাকা। ঢাকার গুলশান নিকেতন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং রংপুরে কয়েকটি জায়গায় নির্মাণ করেন বহুতল ভবন। বোন এবং জামাইদের নামেও ব্যাংকে FDR ১৮ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, মাহফুজা আক্তারের স্বামী তার কানাডা প্রবাসী ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে টরেন্টর বাংলা টাউনের ৮ নং রোডে ৩ মিলিয়ন ডলারের একটি বাড়ি কিনেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, সাবেক মহাপরিচালক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম-এর নেতৃত্বে মাহফুজা আক্তার বিটিভিতে দুর্নীতির একটা বলয় তৈরি করেছেন। ফলে সহজে তাদের কাছে তথ্য পাওয়া যায় না। পেলেও ভুল তথ্য দিয়ে অসহযোগিতা করছেন। অন্যদিকে, বিটিভির কর্মকর্তা/কর্মচারীরা মনে করছেন যে, মাহফুজা আক্তার ১৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, শতাধিক প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ এবং অনেক ধরনের বড় বড় অপরাধ করার পরেও কর্তৃপক্ষ যেহেতু তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি অতএব স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের কয়েকজন বিপথগামী দুষ্কৃতকারী আমলা, রাজনীতিবিদ এবং বিশাল অর্থের বিনিময়ে তিনি এবারও পার পেয়ে যাবেন।
বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মাহফুজা আক্তার চাকরির শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শ ম রেজাউল করিম, টিপু মুনশি, উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক ডিজি আবদুল মান্নান এবং এম হামিদসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীদের সাথে অবাধে মেলামেশা করতেন। তাদের প্রভাব খাটিয়ে সবখানে রাজত্ব কায়েম করতেন।
বিটিভির শিল্পী, কলা-কুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করছেন বিটিভির ইতিহাসে এ ধরনের লুটপাট কখনোই ঘটেনি। সাবেক ডিজি ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম, ডিডিজি ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ (দুর্নীতির অডিশন কমিটির আহবায়ক), সাবেক জিএম মোছা: মাহফুজা আক্তার, অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মো: আতাউর রহমান, নিয়ন্ত্রক (ডিজাইন) মোহাম্মদ সেলিম, পিএম (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোল্লা আবু তৌহিদ, পিএম সাহরিয়ার মোহাম্মদ হাসান এবং যন্ত্রশিল্পী সুমন রেজা খান সিন্ডিকেটের কারণেই বিটিভির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ঢাকা কেন্দ্রের শিল্পী সম্মানি খাতে ৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৬ মাস অনুষ্ঠান নির্মাণ না করে (পুনঃপ্রচার অনুষ্ঠান দিয়ে ট্রান্সমিশন চালানো হয়েছে) অর্থ বছরে সম্পুর্ণ খরচ দেখানো মানে হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। দুর্নীতির এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বহু শিল্পী, কলা-কুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্প্রতি মানব বন্ধন করে বিটিভির সামনে। তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সিন্ডিকেটের অপরাধীরা ভোল পাল্টে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে। তাই অচিরেই সিন্ডিকেট অপরাধীরাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার শিল্পী, কলা-কুশলী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ।
এবিষয়ে সাবেক ডিজি ও সাবেক জিএম সহ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানার জন্য বার বার যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।