অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই, কোনো দল গোষ্ঠী নয়: ভূমি উপদেষ্টা

  |  বুধবার, নভেম্বর ২৭, ২০২৪ |  ৯:৩৯ অপরাহ্ণ
24ghonta-google-news

অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধীই হিসেবে। তার পরিচয় কোনো দল গোষ্ঠী হিসেবে নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

তিনি বলেন, কোনো একজন ব্যক্তি যদি কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকে তাহলে সে ব্যক্তিটিই দায়ী হবে। তার ব্যক্তি পরিচয়, সামাজিক পরিচয়, ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় কোন কিছুই সামনে আসবে না। ওঠে আসবে শুধু এই ব্যক্তি সন্ত্রাসী। তাই কাউকে কোন সংগঠনের বলাটা আমরা পরিহার করি। একক অপরাধের জন্য কোনো সংগঠন, দল বা কোন গোষ্ঠীকে আঙ্গুল তোলা উচিত নয়।

24ghonta-google-news
24ghonta-google-news

তিনি বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যে সাজা হওয়া দরকার সেটা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় হোক বা আলিফের হত্যাকাণ্ডের উস্কানি দাতা হোক, অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। গত ২ মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, ধারাবাহিকভাবে কেউ যদি কোনো সংগঠনের পরিচয়ে অপব্যবহার করে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। সেই ব্যক্তি দোষী হবেন, কোনো সংগঠন নয়। ওই ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয় আসবে না, তখন শুধু তার পরিচয় হবে শুধু অপরাধী।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অনেকেই অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলো করে যাচ্ছে, সেই স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায়। যেহেতু তাদের এখনো পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি। এজন্য তারা এসব করার সুযোগ পেয়েছে। এখনই সময় এসেছে যারা নিষিদ্ধ সংগঠনের (ছাত্রলীগ) সদস্য ছিলেন তাদের আইনের আওতায় আনা। তাদের এই মুহূর্তে বাইরে রাখলে, আমাদের আশঙ্কা, সমাজের আশঙ্কা যে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাবে। এজন্য আমরা সতর্ক থাকি। পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেটা আজীবন ছিল, আগামীতেও থাকবে। সেটা বজায় রাখি এবং সকলে মিলে আমরা একটি সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ি।

সভাপতির বক্তব্যে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে লাখ লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হবে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরনের হামলা কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের কারণে কোন আওয়ামী লীগ নেতা তো নয়, কোন সনাতনী সম্প্রদায়ের নয়, চট্টগ্রাম কোনো নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, আলিফকে অত্যন্ত বর্বরতার সাথে মধ্যযুগীয় কায়দায় যেভাবে প্রফেশনালি তাকে মারা হয়েছে। তাই এটা পেশাদার খুনি ছাড়া এ রকম কেউ করতে পারে না। আমি মনে করি ধর্ম বর্ণ রাজনৈতিক নাম নিয়ে সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, তার কোন দল ধর্ম বর্ণ নেই। সে সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত হবে। আর তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। সে যেই হবে যেখান থেকে হবে উঠিয়ে এনে চট্টগ্রামবাসী তার বিচার করবে। কোনো রেহাই সে পাবে না

ধর্মের নামে সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারা এখনো মিছিল করে বেড়াচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধর্মের নাম নিয়ে যেসব সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডারা এখনো মিছিল করে বেড়াচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। যারা প্রায় এক হাজার ছাত্র জনতা শ্রমিককে খুন করেছে। অবৈধ অস্ত্র যতক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার করা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা মাথা ছাড়া দিবে এবং এসব কাজ করবে।

ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্বে থাকা তিনজনকে অব্যাহতি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের যে তিন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অনতিবিলম্বে তাদের ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। ওইসব সন্ত্রাসীরা ওই টাকা ঢালছে। আমরা জানি কারা টাকা ঢালছে। সবাইকে আমরা ছিনি। কারণ এই চট্টগ্রাম শহরে আমরা নতুন নয়, এখানে বড় হয়েছি। সাবধান হয়ে যান, আপনারা কি কারণে করছেন সব জানা আছে। বীর চট্টগ্রাম যখন ফুসে উঠবে তখন কেউ রেহাই পাবেন না। এখনো সময় আছে সাবধান হয়ে যান, আপনারা যে ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার জন্য কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য, দাঙ্গা লাগার জন্য যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করার জন্য যে কাজগুলো করছেন, শক্ত হাতে সেগুলোর জবাব দেওয়া হবে। কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা চিহ্নিত, তারা সন্ত্রাসী। তাই নিরীহ নির্দোষ সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর যাতে কোন ধরনের অনাচার অত্যাচার না হয়। আমরা সবাই চট্টগ্রামের সন্তান। এই চট্টগ্রামেই বাস করতে হবে।আর কেউ যেন হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়। এ জিনিসটাকে আমাদের সবাইকে রোধ করতে হবে। সবাই মিলে সম্প্রীতির শহর, শান্তির শহর, সৌহার্দ্যের শহর উপহার দিতে হবে। বারবার চট্টগ্রামের মানুষ সেটা দেখিয়েছে এবারও চট্টগ্রামের মানুষ সেটা প্রমাণ করবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রাসেল আহমদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি, মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া, হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিস্টান কল্যান ফ্রন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আর কে দাস রুপু, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, সদস্য বিপ্লব পার্থ, চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিব বাপ্পি দে, দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব উজ্জ্বল বরন বিশ্বাস, সদস্য সৌরভ প্রিয় পাল, বিপ্লব চৌধুরী বিল্লু।