সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রশ্নে ইসকন ও সনাতন সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা-হইচই

  |  শুক্রবার, নভেম্বর ২৯, ২০২৪ |  ৯:২১ পূর্বাহ্ণ
24ghonta-google-news

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে রংপুর জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয় মিলনায়তনে জেলা পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) নেতারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করলে তার প্রতিবাদ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হইচই হয়। এ অবস্থায় সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে শান্ত করেন পুলিশ সুপার ও অন্য নেতারা।

24ghonta-google-news
24ghonta-google-news

জেলা পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, সনাতনী ধর্মীয় নেতা উত্তম কুমার সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর সভাপতি সুব্রত সরকার মুকুল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ধীমান ভট্টাচার্য, পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাম জীবন কুন্ডু, কেরামতিয়া মসজিদের ইমাম মাওলানা বায়েজীদ আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ উদ্দিন ইমতিসহ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।

সভায় ইসকন সমর্থিত দুই নেতা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে। এখনও সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে। ইসকন কোনও মৌলবাদী সংগঠন নয়। এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে পালটা বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদ আর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন সুব্রত সরকার মুকুল ও ধীমান ভট্টাচার্য। এ নিয়ে শুরু হয় হইচই ও উত্তেজনা।

পূজা উদযাপন পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক রাম জীবন কুন্ডু বলেন, ‘রংপুরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। ইসকনকে আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মনে করি না।’

মহানগর সভাপতি সুব্রত সরকার মুকুল বলেন, ‘এখানে সমস্যা ইসকনের এক নেতাকে নিয়ে। বিষয়টিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বললে তো হবে না। এজন্য প্রতিবাদ করেছি আমরা।’

সভায় ইমতিয়াজ উদ্দিন ইমতি অভিযোগ করে বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা ভারতপ্রীতি বন্ধ না করলে সমস্যা থাকবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভালো। একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত ও খাওয়াদাওয়া করি। কিন্তু একটি মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।’

বিএনপি নেতা খয়রাত হোসেন ও জামায়াত নেতা সালাম বলেন, রংপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে পতিত ফ্যাসিবাদীরা ইসকনকে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা সফল হবে না।

রংপুর কেরামতিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা বায়েজিদ আহম্মেদ বলেন, দেশে ইসলামিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হলে অমুসলিম ভাইয়েরা আরও বেশি স্বাধীনতা পাবেন।’

পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘পত্রিকাসহ গণমাধ্যমগুলো চটকদার শিরোনাম করে। যা দেখে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। অথচ খবরের ভেতরে কিছু থাকে না। বিষয়টি দেখা উচিত।’

এদিকে, সভা শেষে পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে ইসকন ও হিন্দু নেতাদের আরেক দফা বাগবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায়।