স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে আইসিইউ সিটের আঁকুতি/ মধ্যরাতে হাসপাতালে ছুটছেন কাউন্সিলর খোরশেদ

  |  রবিবার, মে ৩১, ২০২০ |  ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ
মানবতার ফেরিওয়ালা কাউন্সিলর খোরশেদের স্ত্রীর জীবন সংকটে
24ghonta-google-news

২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ। নারায়ণগঞ্জ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খোন্দকার খোরশেদ। করোনার কথা শুনলেই যখন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবরা সরে যান, ঠিক তখনই করোনায় মৃত মরদেহের পাশে এসে দাড়ায় এ কাউন্সিলর।

গত ৮ এপ্রিল থেকে কোভিড–১৯–এ মারা যাওয়া রোগী, করোনার উপসর্গ বা সন্দেহ করা হয় এমন রোগীর লাশ এবং কিছু ক্ষেত্রে যক্ষ্মাসহ অন্যান্য রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশও দাফন এবং সৎকার করে চলেছেন।কাউন্সিলর খোরশেদ

24ghonta-google-news

তার নেতৃত্বে টিমের সদস্যরা এ পর্যন্ত ৬১ জনের মরদেহ দাফন করে। ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ উপাধি নিয়ে এই কাউন্সিলরের নামও ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সেই ফেরিওয়ালাই এখন নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শনিবার নমুনার পরীক্ষার ফলাফলে তার করোনা পজিটিভ আসে।

একদিন আগে নমুনা পরীক্ষার পর মাত্র বারো ঘন্টা আগে খোরশেদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এই সময় তার আইসোলেশনে বিশ্রামে থাকার কথা।

কিন্তু এর এক সপ্তাহ আগে গত ২৩ মে তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনার শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। বর্তমানে লুনার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তিনি। এই অবস্থায়ও পাওয়া যাচ্ছে না কোনো হাসপাতালের আইসিইউ।

গণমাধ্যম সূত্রে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ এবং সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের মাধ্যমে ‘বীর বাহাদুর’ খ্যাত এই কাউন্সিলর স্ত্রীর জীবন বাঁচাতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজের কথা না ভেবে করোনায় আক্রান্ত সহধর্মিনীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে মধ্যরাতে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি।

জনপ্রিয় এবং বহুল আলোচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্ত্রী লুনার জন্য আইসিইউ সিট পেতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে শনিবার মধ্যরাতে জেলার সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় সাজেদা হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছেছেন। যেখানে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।

তবে সেখান থেকে আইসিইউ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি এখন পর্যন্ত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাউন্সিলর খোরশেদের পরিচয় জানতে পেরে সকালের মধ্যে আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।কাউন্সিলর খোরশেদ

করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনসহ আক্রান্তদের সহযোগিতায় এই কাউন্সিলরের গড়া ১৩ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল “টীম খোরশেদ থার্টিন” এর সার্বক্ষণিক সদস্য আশরাফুজ্জামান হীরা জানান, আইসিউ বেড-সম্পন্ন হাসপাতালে স্ত্রীকে দ্রুত ভর্তি করতে রাত সাড়ে দশটা থেকেই জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তারাসহ বিভিন্নজনকে ফোন দিয়ে কথা বলছেন খোরশেদ।

স্ত্রীর শারীরক অবস্থার কথা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে তাদেরকে অনুরোধও করেন খোরশেদ।

খোরশেদ বলেন, ‘আইসিইউ পেতে হয়ত সকাল হয়ে যাবে। বাঁচা মরা তো আল্লাহর হাতে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনার শ্বাসকষ্ট বাড়ার পাশাপাশি পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। এছাড়া সে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে লুনাকে। বিশেষ করে আমার করোনা পজিটিভ হওয়ার খবরে আরও ভেঙ্গে পড়েছে সে।’

তিনি আরও জানান, শনিবার বিকালে লুনার অবস্থার অবনতি হলে তিনি আইসিইউর ব্যবস্থা করতে শুরু করেন। কিন্তু পাননি। নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকায়ও আইসিইউ পাননি। নারায়ণগঞ্জে শুধু সাজেদা হাসপাতালে চারটি আইসিইউ বেড আছে, তবে সেগুলোতে রোগী ভর্তি। অন্য কোথাও নেই। তাই নানা হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত আবারো এ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আইসিইউর জন্য অনুরোধ করেছি। তারা সকালে দেবে বলেছে। একটি আইসিইউ হলে হয়ত আমার স্ত্রীর শ্বাস নেওয়াটা স্বাভাবিকভাবে চলতো।

সবাইকে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়ে খোরশেদ বলেন, আমার তিন সন্তান। ওরা ভেঙ্গে পড়েছে। ওদের জন্য একটু দোয়া করবেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন।

২৪ ঘণ্টা/রাজীব প্রিন্স

24ghonta-google-news
24ghonta-google-news