ডাকাতিয়া নদী তুমি কার? নদী দখল করে মাছের ঘের! প্রশাসন নিরব

  |  রবিবার, জানুয়ারি ১০, ২০২১ |  ৭:০৮ অপরাহ্ণ
24ghonta-google-news

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষীপুরের ঐতিহ্যবাহী ডাকাতিয়া নদী দখল করে মৎস্য ঘের করছে একটি মহল। প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও এই দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না স্থানীয় প্রশাসন। দুপুরে ডাকাতিয়া নদী দখল করে, বাধ দিয়ে একটি মহল মৎস্য ঘের তৈরি করছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ভয়ঙ্কর চিত্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড রায়পুর ও নিয়ন্ত্রণাধীন চাঁদপুর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিও মিলছে না কোনো সুফল। দায়সারা ভাবে একটি নোটিশ দিয়েই চুপসে থাকেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজীমারা রেগুলেটর সুইচ গেট হতে ৫ ফিট দূরে ডাকাতিয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে নদী দখলের মহোৎসব চলছে।

24ghonta-google-news

নদী গর্ভের কাছাকাছি আড়াআড়িভাবে প্রায় ১কি:মি: জুড়ে মাটি দিয়ে বাঁধ সৃষ্টি করে ৪টি মাছের ঘের তৈরী করা হয়েছে।যার মোট পরিমান প্রায় ১০ একর।একেকটি ঘেরের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট এবং লম্বায় প্রায় আড়াই একর পরিমান।ঘেরের চারদিকে কলাগাছ রোপন করা হয়েছে।নতুন করে আরো কয়েকটি মাছের ঘের তৈরীর কাজ চলছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জমি জোড়পূর্বক দখল করে পুকুর,প্রজেক্ট,মাছের ঘেরসহ দোকান-পাট নিমার্ণ করছে।সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রায়পুরে বিভিন্ন পয়েন্টে দিনের পর দিন ডাকাতিয়া নদী দখল করে যাচ্ছে একটি মহল।কেউ ইজারা নামে দখল করছে কেউবা জোড়পূর্বকভাবে ভোগ দখল করে যাচ্ছে পাউবোর সম্পত্তি।

অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার নন্দনপুর গ্রামের আয়াত উল্যাহ ভূঁইয়ার ছেলে কামাল হোসেন ভূঁইয়া,রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউপির চরলক্ষ্মী গ্রামের রফিক আঁখন, ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী আঁখন,সাবেক ইউপি সদস্য খালেক আঁখন এবং আব্বাস মাঝিসহ কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক হাজীমারা রেগুলেটরের ৪ ফিট দূরে মাঝ নদীতে পাউবোর অধীগ্রহনকৃত জমিতে বাঁধ দিয়ে পুকুর/প্রজেক্ট তৈরী করছে ।

এনিয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে কামাল হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন-‘আড়াই একর জমি জেলা পরিষদ থেকে বছর প্রতি ৩০ হাজার টাকা লীজ নিয়েছি। এটা কোন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি নয়।আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে।’ কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারবেন কিনা? এমন প্রশ্নের সুদুত্তরে তিনি বলেন,’আমাকে দুইদিন সময় দেন। আমি আপনার অফিসে আসবো। কাগজপত্র আপনাকে দেখাবো।’ তবে নানান নাটকীয়তায় পরও অভিযুক্ত কামাল হোসেন ভূঁইয়া কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেননি।

স্থানীয়রা জানান,নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারনে একদিকে যেমন নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে,পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।পাশাপাশি,অত্রাঞ্চলের বন্যা জনিত সৃষ্ট পানি অপসারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।এছাড়াও যেসব জেলেরা মাছ শিকার করে নিজেদের জীবিকা আহরণ করত,তারা তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে ।পরিশেষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানান স্থানীয়রা।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কর্তৃপক্ষের রায়পুর পওর শাখা- ৩ (হাজীমারা) উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাকিল মাহমুদ এর স্বাক্ষরিত গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ইং অভিযুক্ত কামাল হোসেন ভূঁইয়ার বরাবর নোটিশ জারি করে।যার স্মারক নং-উ.স.প্র/রায়/শা-৩/২০২০/১১২।নোটিশে বাধঁ অপসারণের জন্যে ৩ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হলেও নোটিশের ১২ দিন হতিবাহিত হওয়ার পরও বাঁধটি অপসারণ করা হয়নি।

রায়পুর পওর শাখা-৩ (হাজীমারা) উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাকিল মাহমুদ জানান, রায়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। উল্টো অভিযুক্ত কামাল হোসেন ভূঁইয়া আমাকে উকিল নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছে।তিনি নাকি জেলা পরিষদ থেকে লীজ নিয়েছে।

এবিষয়ে রায়পুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাবরীন চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

24ghonta-google-news
24ghonta-google-news